বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার

আজ ভাওয়াল বীরের ৭০তম জন্মদিন

আজ ভাওয়াল বীরের ৭০তম জন্মদিন

আজ ৯ নভেম্বর গাজীপুর-২ আসনের প্রয়াত এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ৭০তম জন্মদিন।

দিনটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি স্মৃতি পরিষদসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন।

১৯৫০ সালের এই দিনে তিনি গাজীপুরের হায়দরাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সোমবার সকালে মহানগরীর হায়দরাবাদ গ্রামে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের পরিবারের পক্ষ থেকে কবর জিয়ারত, পুষ্পমাল্য অর্পণ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হয়েছে। দুপুরে টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে চেরাগআলী ট্রাক স্ট্যান্ডে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে।

শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. মতিউর রহমান করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের জন্মদিনের সকল কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করার জন্য নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন।

এর আগে, রোববার রাত ১২টা ১ মিনিটে টঙ্গী নতুন বাজারে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে গাজীপুর মহানগর যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেক কাটার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু করে।

২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুর-২ আসনের এমপি ও জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী কমিটির সভাপতি পদে থাকাকালীন সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে শহীদ হয়েছিলেন আহসান উল্লাহ মাস্টার। এ ঘটনার পরদিন তার ছোট ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় ২০০৪ সালের ১০ জুলাই পুলিশ অভিযোগপত্র জমা দেয়। ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল এ মামলায় ২২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। একই সঙ্গে খালাস দেয়া হয় দুই আসামিকে।

আহসানউল্লাহ মাস্টার জন্ম ১৯৫০ সালের ৯ নভেম্বর, তৎকালীন ঢাকা জেলার (বর্তমান গাজীপুর) পুবাইল ইউনিয়নের হায়দরাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

আহসানউল্লাহর শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিজ গ্রামের হায়দরাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষ করে টঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। আহসানউল্লাহ ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করে তৎকালীন কায়েদে আযম কলেজে (বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ) একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৭০ সালে ডিগ্রি পাস করার পর আহসানউল্লাহ টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে তিনি ওই বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক (১৯৭৭-১৯৮৪) ও প্রধান শিক্ষকের (১৯৮৪-২০০৪) দায়িত্ব আমৃত্যু পর্যন্ত পালন করেন। আহসানউল্লাহ মাস্টার টঙ্গী শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে সক্রিয় ছিলেন।

আহসানউল্লাহ মাস্টার ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার আগে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটক ও নির্যাতিত হয়েছিলেন। ভারতের দেরাদুনের তান্দুয়া থেকে গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে পুবাইল, টঙ্গী, ছয়দানাসহ বিভিন্ন জায়গায় গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ জয়দেবপুরের ক্যান্টনমেন্টের বাঙালী সৈন্যদের নীরস্ত্র করতে ঢাকা থেকে আসা পাকিস্তানী বাহিনীকে ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়ার জন্য জনতাকে উদ্বুদ্ধ করার কাজে তার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

১৯৬২ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন-এর বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি। তখন তিনি ছাত্রলীগ করতেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবি নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা যখন রাজপথে, তখনো আহসানউল্লাহ সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৬৯ সালে ১১ দফার আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।

১৯৮৩ সালের পুবাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ—প্রতিটি নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছেন বিপুল ভোটে। ১৯৮৮ সালে পুবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এর আগে তিনি ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া আহসানউল্লাহ মাস্টার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) চেয়ারম্যান ছিলেন। তার জ্যেষ্ঠ ছেলে মো. জাহিদ আহসান রাসেল বর্তমানে জাতীয় সংসদের সদস্য, ছোট ছেলে জাবিদ আহসান সোহেল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।